কিভাবে সহজে উদ্যোক্তা মন গড়ে তুলবেন জেনে নিন, উদ্যোক্তা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা মনের গভীরে অনেকেই স্থান করে রাখেন। উদ্যোক্তা ল্যাবের পক্ষ থেকে আজ আমরা আলোচনা করবো কিভাবে উদ্যোক্তা মন গড়ে তুলবেন । সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং শেয়ার করে দিন বন্ধুদের কাছে।
উদ্যোক্তা মন গড়ে তোলার উপায়:
উদ্যোক্তা মন গড়ে তুলতে আগে আপনাকে জানতে হবে উদ্যোক্তা কি বা উদ্যোক্তা কাকে বলে? উদ্যোক্তাকে আবার ব্যবসায়ীও বলা যায়। কিন্তু একজন উদ্যোক্তা আর ব্যবসায়ীর মধ্যে অনেকটা ভিন্নতা রয়েছে।
মনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে নিজের মনেকে তৈরি করে মানুষ। অনেকেই নিজেকে প্রশ্ন করে টাকা নেই, আমার দ্বারা ব্যবসা হবে না কিংবা বিশ্বস্ত মানুষ পাব কই, পরিবারের কেউ কখনো ব্যবসা করেনি , আমি কি পারব? আমার জিনিস কিনবেই বা কে—এ রকম আট পাঁচ ভেবে অনেকেই এক ধাপ এগিয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে যান। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য স্বপ্ন যেমন দেখছেন, সাহসও তেমনি দেখাতে হবে।সেই সাথে দরকার প্রচন্ড প্রকারের মেধা ও শ্রম। সকল কাজে ঝুঁকি থাকবেই, তাই মনকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। মনের মাঝে আনতে হবে নতুন নতুন সৃজনশীলতা, নেতৃত্বের ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে নিজের মাঝে। এ রকম অনেক গুলো বিষয় আছে যা উদ্যোক্তার মনকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। এখানে আজ আমরা জানবো তেমনই কয়েকটি বিষয়ঃ
১. অভিজ্ঞদের কথা শুনুন—কিছু শুরু করতে হলে আগে অভিজ্ঞদের কথা শুনে প্রাথমিক ধারণা নেওয়াটা জরুরী । কীভাবে তারা ঝুঁকি নিয়েছেন এবং কীভাবে তা মোকাবিলা করেছেন সেসব কাহিনীগুলো মনের মাঝে গেঁথে ফেলা দরকার। মার্ক জাকারবার্গের মতো বিশ্বের সফল ব্যক্তিবর্গও বলেছেন, নিজেদের সাফল্যের জন্য পরামর্শদাতাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া অনেক অভিজ্ঞতাও জীবনে কৃতিত্ব এনে দেয়। পরামর্শদাতাদের সাথে আপনার ধারণার অনেক মিলই হয়তো পাওয়া যাবে, তবে সেই সঙ্গে তাঁরা কোন বিষয়ে অবশ্যই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে, ক্ষতিকারক বিষয়গুলো চিহ্নিত করে দেবে।
২. জ্ঞান অর্জনে যত পারেন পড়ুন—পরামর্শদাতাদের পাশাপাশি প্রকাশিত বিভিন্ন বই ও নিবন্ধগুলো থেকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যারা তাদের অভিজ্ঞতা লিখে রেখে বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নেয়, তাঁরা চান যে আপনি তাদের থেকে ভুল এবং সাফল্যগুলো শিখুন এবং তারা বাস্তব-কাহিনীই তুলে ধরে যা আপনি নিজের উদ্যোগে প্রয়োগ করতে পারবেন।
৩. জীবনকে করুন সুশৃঙ্খল— নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে জীবনযাপনে সুশৃঙ্খল হওয়া খুবই জরুরি। এতেই আপনার কর্মে সুশৃঙ্খলা বিরাজ করবে। পেশাগত ও ব্যক্তিগত উভয় জায়গাতেই সময় নষ্ট করার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৪.নতুন চ্যালেঞ্জ খুঁজে বের করুন—উদ্যোক্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হলো সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা। চিন্তা করতে হবে দ্রুত, বিভিন্ন সেক্টরে আপনাকে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে । পাশাপাশি এর সৃজনশীল সমাধান করতে হবে, যা এর আগে অন্য কেউ করেনি। আর এই ধরনের দক্ষতা বিকাশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সন্ধান করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা গ্রহণ করা শিখতে হবে, অন্যের চিন্তাভাবনা ও ধারণাটি আন্তরিক ও মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। এর পাশাপাশি মস্তিষ্ককে খাটাতে হবে। কোন ফলাফল বা সমাধানকে আপনি বেশি-কম ফোকাস করবেন, তা আপনাকেই বেছে নিতে হবে।
৫. নিজের লক্ষ্য নিয়ে প্রায় সময়ই ভাবুন— উদ্যোক্তা হলে ভালো হতো, শুধু এমনটা ভেবেই বসে থাকলে চলবে না—তাহলে নিজের কঠিন পথকে কখনই সহজ করা যাবে না। প্রতিটা মুহূর্ত নিজের লক্ষ্য নিয়ে ভাবতে হবে ও আলোচনা করতে হবে। নিজেই নিজেকে প্রেরণা দিন।
৬. ব্যবসা সম্পর্কিত বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করুন—উদ্যোক্তা হিসেবে যারা সফল হয়েছেন, তারা একটা কথা খুব বলেন। আর তা হলো, যে জিনিসটি নিয়ে ব্যবসায় নামছেন, সেটি সম্পর্কে আপনাকে পুরোপুরি জানতে হবে। অহংকারকে এড়িয়ে চলতে হবে। আপনার ব্যবসা সম্পর্কিত প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনার হাত থাকতে হবে। আপনার কর্মীদের কাজের ধরন বুঝতে হলে বিভিন্ন ভূমিকাতে তাদের পাশাপাশি কাজ করতে হবে। এতে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে এবং একটি দলীয় ভাবে সহযোগিতা এবং বন্ধনের সুযোগ তৈরি করবে।
৭. কথা বেশি বলার চেয়ে শুনুন বেশি— এই বিষয়টি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই পালন করা উচিত। নিজে কথা বেশি না বলে শ্রোতা হওয়াটা বেশি জরুরি। মনোযোগ দিয়ে সবার কথা শুনুন, এরপর নিজের বিচার বুদ্ধি খাটিয়ে তা বিবেচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৮. অন্যকে সাহায্য করতে শিখুন— অন্যের কাজ থেকে যেমন আমরা শিখি তেমনি অন্যকে সাহায্য করার মনোভাবও একজন উদ্যোক্তার রাখা আবশ্যক। অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তার শিক্ষার বৃদ্ধি ঘটে। আর এটি মনে রাখা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।